স্টাফ রিপোর্টার: যুক্তরাজ্যে নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মুহূর্তে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক রুটের সব ফ্লাইট চলাচল জরুরিভিত্তিতে বন্ধ করে দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিশ্বে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার সময় দেশে আন্তর্জাতিক রুটের সব ফ্লাইট বন্ধ করে দিলে দেশে এতো সংক্রমণ হতো না। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগেই সরকারি পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক রুটের সব ফ্লাইটসহ স্থলপথে যোগাযোগ এখনই বন্ধ করে দিতে হবে।
এবিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, দ্বিতীয় দফায় করোনার সংক্রমণ যেন মারাত্মক আকার ধারণ না করে, সেজন্য এই মুহূর্তে আন্তজার্তিক রুটের সব ফ্লাইট চলাচল ফের বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। প্রথম দফায় সংক্রমণকালে ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের মাধ্যমেই দেশে করোনার সংক্রমণ হয়। পরবর্তীতে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
আন্তজার্তিক রুটের সব ফ্লাইট বন্ধ করার ব্যাপারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চ মহলকে অবগত করা হয়েছে বলেন জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
চলতি বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। অনেকেই অভিযোগ করছিলেন, ইতালি ফেরত প্রবাসীদের মাধ্যমেই দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়। সে সময়ে ইতালির সঙ্গে বাংলাদেশের সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হলে সংক্রমণের হার কমে যেত।
এদিকে, চলতি মাসে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে বৈশ্বিক প্রাণঘাতী করোনা মহামারি মোকাবিলায় পুরো বিশ্ব যখন একটি কার্যকর ও নিরাপদ টিকার প্রত্যাশা করছে, ঠিক তখনই ব্রিটেনে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক এবং কানাডা। আরো কয়েকটি দেশ নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বিবেচনা করছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর নেতারা সোমবার এক বৈঠকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করছেন। ভারতও যুক্তরাজ্য থেকে আসা বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। করোনার প্রথম ধাক্কায় ইউরোপের মধ্যে বিপর্যয়ে পড়া দেশ ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ফ্লাইট নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে। ফ্রান্স এবং জার্মানিও একই ব্যবস্থা নেয়ার কথা বিবেচনা করছে।
এমন মারাত্মক পরিস্থিতিতে রোববার হঠাৎ করেই লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বিরাট অংশ জুড়ে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়েছে। নতুন করোনাভাইরাস এসব এলাকায় দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
গবেষকরা লন্ডন এবং আশেপাশের অঞ্চলে যে ভাইরাসের বিস্তার দেখছেন, সেটিকে নিউ ভ্যারিয়েন্ট, অর্থাৎ নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাস বলে বর্ণনা করছেন। এটি যে আগেরটির চেয়ে অনেক বেশি প্রাণঘাতী সে রকম কোনো প্রমাণ না পেলেও আতঙ্ক ধাওয়া করছে। আর এ ভাইরাসকে মোকাবিলার ক্ষেত্রে নতুন টিকা ভিন্ন ফলাফল দিচ্ছে কিনা সেটাও তারা বুঝতে পারছেন না।
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন, অন্য যে কোনো ভাইরাসের মতো নতুন ভাইরাসটিও মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে। তার বৈশিষ্ট্য এবং আচরণে পরিবর্তন ঘটতে পারে। লন্ডন এবং আশেপাশের অঞ্চলের ভাইরাসটি নতুন এক পরিবর্তিত রূপ বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এটা অনেক সহজে ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আগের চেয়ে নতুন করোনাভাইরাস ৭০ শতাংশ বেশি হারে ছড়াচ্ছে।
উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, নতুন বৈশিষ্ট্যের এ ভাইরাস এখন নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়াতেও নাকি পাওয়া গেছে। এটা নিয়ে তারা যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক স্বীকার করেছেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় কঠোর বিধিনিষেধ জারি করতে হয়েছে। ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, এবারের কঠোর লকডাউন দুই মাস ধরে চলতে পারে।
এবিনিউজ টুয়েন্টিফোর বিডিডটকম//এফ//