সোমবার ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৫ ভাদ্র ১৪৩১
 
দক্ষিন এশিয়ায় ৩ টি দেশের অবস্থা সংকটজনক
বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকটজনক : আর্টিকেল নাইনটিন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ১০:১৮ পিএম |

 স্টাফ রিপোর্টার: গ্লোবাল এক্সপ্রেশন রিপোর্ট (বৈশ্বিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিবেদন) অনুযায়ী বাংলাদেশের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকটজনক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার একযোগে বিশ্বের সবকটি দেশে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়ে। এই উপলক্ষ্যে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আর্টিকেল নাইনটিন। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সংস্থার দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম। সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

রিপোর্টের তথ্যানুযায়ী  বিশ্বব্যাপী অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংকটের মধ্যে জীবনযাপন করছে। ২০২৩ সালে এমন সংকটের মধ্যে থাকা মানুষের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ শতাংশে। এর অর্থ হচ্ছে বিশ্বের ৩৯টি দেশের ৪শ কোটি মানুষ এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংকটের মধ্যে থাকা দেশগুলোতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সবচে বড় অবদান রেখেছে ভারত। দেশটি এক বছরের ব্যবধানে (২০২২ থেকে ২০২৩) বৈশ্বিক মতপ্রকাশের এই সূচকে ‘উচ্চ বিধিনিষেধপূর্ণ’ শ্রেণী থেকে ‘সংকটজনক’ শ্রেণীতে নেমে গেছে। মতপ্রকাশের সংকটজনক শ্রেণীতে অবস্থান বাংলাদেশেরও। ১২ স্কোর নিয়ে এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮তম। এছাড়া ২৪টি দেশ অতি বাধাগ্রস্ত শ্রেনীতে, বাধাগ্রস্ত ২৫টি, স্বল্প বাধাগ্রস্ত ৩৫টি এবং মতপ্রকাশের মুক্ত শ্রেণীতে রয়েছে ৩৮টি দেশ। 

বৈশ্বিক মতপ্রকাশ সূচকের গড় স্কোর এবং হিউম্যান স্কোর (প্রতিটি দেশের জনসংখ্যার ভরযুক্ত গড়)- দুটি ক্ষেত্রেই ২০২৩ সালে বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বিগত এক দশকে মতপ্রকাশ সংশ্লিষ্ট স্কোরগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেলেও এখন আবার স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।

এই সূচকে ৯৫ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ডেনমার্ক। এরপরে ৯৩ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে সুইজারল্যান্ড ও সুইডেন। অপরদিকে শূণ্য স্কোর নিয়ে শীর্ষ সংকটজনক দেশ উত্তর কোরিয়া, ১ স্কোর নিয়ে ইরিথ্রিয়া, নিকারাগুয়া, বেলারুস, তুর্কমেনিস্থান। এর পরেই অবস্থান চীন, আফগানিস্তান , সিরিয়া ও মায়ানমারের।

২০০০ সাল থেকে মত প্রকাশের স্কোর বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে এই সময়ে বাংলাদেশের স্কোর কমেছে ৩২ পয়েন্ট । ২০০০ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিলো ৪৪, যেটি মতপ্রকাশের শ্রেণীগত দিক থেকে বাধাগ্রস্ত হিসেবে বিবেচিত। ”বাধাগ্রস্ত” থেকে অতিবাধঅগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবনমন হয়েছে ২০০৬ সালে । পরবর্তী বছর ২০০৭ সালে আরো ১০ পয়েন্ট কমে স্কোর নেমে আসে ২৯ এ। পরের দুই বছর (২০০৮ ও ২০০৯ সালে) স্কোর ৫ পয়েন্ট বেড়ে ৩৪ -এ উন্নীত হলেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি পরবর্তী বছরগুলোতে । ২০১৪ সালে স্কোর ৪ পয়েন্ট কমে ১৬ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মতপ্রকাশের সংকটজনক শ্রেণীতে ঢুকে পড়ে। যা থেকে বাংলাদেশ এখনো উত্তরণ ঘটাতে পারেনি।

দক্ষিন এশিয়ায় মুক্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। এ অঞ্চলের ৮টি দেশের মধ্যে ৩ টির অবস্থাই সংকটজনক (ভারত , বাংলাদেশ , আফগানিস্তান)। মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে উন্নতি দেখিয়েছে শ্রীলঙ্কা। স্কোর  ৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ এ, এতে দেশটি অতি বাধাগ্রস্ত থেকে বাধাগ্রস্ত শ্রেণীতে উঠে এসেছে।ভারতের অতিবাধাগ্রস্ত থেকে সংকটজনক শেণীতে অবনমন ঘটেছে। আর জনসংখ্যা বিবেচনায় নিলে এ অঞ্চলের ১৮৮ কোটির বেশি মানুষ মত প্রকাশের অতি বাধাগ্রস্ত বা সংকটজনক পরিস্থিতেই রয়েছে।
 
এক বছরে ১০টি দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবনতি হয়েছে , যেখানে বাস করে ৪৫ কোটি ১০ লাখ মানুষ । বিপরীতে ৫টি দেশের ক্ষেত্রে উন্নতি দেখা গেছে যেখানে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৩৩ কোটি ৫০ লাখ। বড় অবনতির শিকার হয়েছে  বুর্কীনা ফাসো (৩৭)। স্কোর কমে গেছে ২৪ পয়েন্ট । ১০ পয়েন্ট কমে এরপরেই রয়েছে মঙ্গোলিয়া (৫৫) এবং ৯ পয়েন্ট কমে স্কোর কমায় তৃতীয় অবস্থানে সেনেগাল (৫৮) 

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন:  প্রকাশিত রিপোর্টটি আমাকে অবাক করেনি । পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য নাগরিক সমাজের কথা সরকারকে কানে নিতে হবে।  ভাবমূর্তি উন্নত করতে হলে আমাদের দূরে না সরিয়ে সবার সাথে আলাপ আলোচনা করে কাজ করতে হবে। সঠিক কথা বলার জন্য শাস্তি নয়, তা বিবেচনায় নিয়ে সংশোধনের রাস্তা খুঁজতে হবে। 

দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান: বাংলাদেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এসব পরস্পর সম্পর্কযুক্ত, সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে আমরা সংকটজনক অবস্থায় রয়েছি। বিশেষ করে সংবাদ মাধ্যমের ক্ষেত্রে ডিজিটাল বা সাইবার সিকিউরিটি আইনের কারণে একটা ভয়ের সংস্কৃতি রয়ে গেছে এর থেকে বের হতে না পারলে সূচকে ক্রমান্বয়ে অবনতি হতে থাকবে। 


সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন: মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি। মত প্রকাশের স্বাধীনতার সাথে রাজনৈতিক প্রেক্ষিত বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই । ক্ষমতার হাতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি জিম্মি। বাংলাদেশের সব মানুষের .মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই তা বলা যাবে না। সত্য হোক বা মিথ্য কিছু মানুষের সব কথা বলার অধিকার রয়েছে। আবার বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই মতপ্রকাশ অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হয়। আমাদের এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ক্ষমতায় আকড়ে থাকা অথবা যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়াটা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ফলে গঠনমূলক সমালোচনা সহ্য করার সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে বার্তা বাহককেই ঘায়েল করতে যাওয়ার চেষ্টা। 

আর্টিকেল নাইনটিন, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম বলেন: ২৫টি সূচকের মধ্যে ৮টি জিজিটাল অধিকার বিষয়ে। সবগুলো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের স্কোর সম্পূর্ণ ঋণাত্বক। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন দেখছি। কাজ চলছে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের। একই সময়ে নাগরিকের ডিজিটাল রাইটস খর্ব করাটা সরাসরি সাংঘর্ষিক । সরকারের সমস্ত উদ্যোগের প্রাণ কেন্দ্রে থাকতে হবে নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করা। অধিকার নিশ্চিত না হলে কোনো উদ্যেগই সত্যিকার অর্থে ফল বয়ে আনতে পারবে না।  আর্টিকেল নাইনটিনসহ সব নাগরিক অধকার সংগঠনকে সরকারের সহযোগি শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে মনজুর বলেন সংস্থাটি সাধ্যমতো দেশের মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাবে সরকারের সহযোগি শক্তি হিসেবে। 


রিপোর্টটিতে ১৬১ দেশের ২৫টি সূচক ব্যবহার করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পরিমাপ করা হয়। নির্বাচিত ২৫টি সূচক সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য V-Dem Dataset  থেকে সংগৃহীত এবং বায়েসিয়ান মডেল ব্যবহার করে  GxR স্কোরিং ম্যাট্রিক্স তৈরি করা হয়েছে। এসব সূচকে ৬টি বড় জিএক্সআর ক্যাটাগরিতে  (সংযুক্ত) ভাগ করা যেতে পারে যেমন- ডিজিটাল অধিকার (৮টি সূচক), ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা (৫টি), গণমাধ্যমের স্বাধীনতা (৩টি) , নাগরিক অংশগ্রহণ ও নাগরিক সমাজ ও সংগঠন (৫টি) , আইন ও তার প্রয়োগ (২টি) এবং সবশেষ রাজনৈতিক অংশগ্রহণ (২টি)। যার ভিত্তিতে সূচকগুলোর বিপরীতে প্রতিটি দেশের জন্য ০ থেকে ১০০ এর মধ্যে একটি মতপ্রকাশ বা এক্সপ্রেশন স্কোর নির্ধারণ করা হয়। সেই স্কোর অনুযায়ী দেশগুলোকে সুনির্দষ্ট ৫টি শেণীতে ভাগ করা হয় । মুক্ত, স্বল্প বাধঅগ্রস্ত , বাধাগ্রস্ত , অতি বাধাগ্রস্ত বা সংকটজনক।





এবিনিউজ টুয়েন্টিফোর বিডিডটকম//এফ//








সম্পাদক: শাহীন চৌধুরী
উপদেষ্টা সম্পাদক: হেলেনা বিলকিস চৌধুরী, নির্বাহী সম্পাদক: বরুণ ভৌমিক নয়ন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: সৈয়দ আফজাল বাকের

ঢাকা অফিস: ২/১ হুমায়ুন রোড (কলেজ গেট) মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭ ফোন: ৮৮-০২-৪৮১১৯৪৯৫, হটলাইন: ০১৭১১-৫৮৩৬২৩, ০১৭১৭-০৯৮৪২৮, চট্টগ্রাম অফিস- আবাসিক সম্পাদক: জাহিদুল করিম কচি, নাসিমন ভবন (দ্বিতীয় তলা) ১২১, নূর আহমেদ রোড, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
ফোন: ০৩১-২৫৫৭৫৪২ হটলাইন: ০১৭১১-৩০৭১৭১, E-mail : abnews13@gmail.com, Web : www.abnews24bd.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, এবিনিউজ | Developed By: i2soft