স্টাফ রিপোর্টার:জাপান প্রবাসী আরিফুল ইসলাম (২৭) হত্যার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। খুব ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে আরিফুলকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত পারভীন আরিফুল ইসলামের নোটারির মাধ্যমে বিয়ে করা স্ত্রী।
গত ১৭ মে পারভীন কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসেন। আরিফুলকে হত্যা করে পরদিন সকালে ১৮ মে তিনি আবার কানাডায় চলে যান। আরিফুল ও পারভীন আক্তার দুজনেরই বাড়ি নরসিংদী জেলায়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৭ মে ভিকটিম আরিফুল ইসলাম ও অভিযুক্ত পারভীন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মাটি প্রপার্টিজের একটি অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেন। সেখানে সাত দিনের জন্য বুকিং দেন তারা। ১ জুন সেই অ্যাপার্টমেন্ট থেকেই ভিকটিম আরিফুলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহের বুকে ও গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ভিকটিম আরিফুল এক বছর ধরে জাপানে বসবাস করতেন। সেখানে জাপানি এক নারীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
মোবাইল নম্বরের সিডিআর ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৭ মে পারভীন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বসুন্ধরা আবাসিকের ওই অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেন। তার সঙ্গে ছিলেন আরিফুলও।
পরদিন ১৮ মে সকাল সাড়ে ৬টায় পারভীন একা ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যান। তার মোবাইল নম্বরের সর্বশেষ অবস্থান ছিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
ভাটারা থানা সূত্র জানায়, যে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে সেখান থেকে আরিফুল ও পারভীনের নোটারি করা বিয়ের হলফনামা পাওয়া গেছে। হলফনামায় লেখা ছিল, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর আরিফুল ও পারভীনের বিয়ে হয়।
তবে, তাদের এই বিয়ের কথা তারা দুজন ছাড়া আর কেউ জানত না। এমনকি দুই পরিবারের সদস্যরাও জানতেন না। তারা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে একান্তে সময় কাটানোর সুবিধার্থে নোটারি করে বিয়ে করেন।
এদিকে অভিযুক্ত পারভীনের কানাডায় এক স্বামী রয়েছেন। তার নাম নাজমুল হাসান। সাত বছর ধরে তিনি কানাডায় বসবাস করেন। পারভীন কানাডায় যান দুই মাস আগে। কানাডায় যাওয়ার আগে আরিফুলের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বিভিন্ন হোটেলে একান্তে সময় কাটান তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৮ মে সকাল সাড়ে ৬টায় পারভীন একা ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যান। তার মোবাইল নম্বরের সর্বশেষ অবস্থান ছিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সিসিটিভি ফুটেজ ও সিডিআর বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে আরিফুলকে হত্যা করেন পারভীন।
তদন্ত সূত্রে আরও জানা যায়, পারভীনের স্বামী কানাডায় থাকা অবস্থায় আরিফুলের সঙ্গে পারভীনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা প্রায়ই বিভিন্ন হোটেলে একান্তে সময় কাটাতেন। সময় কাটানোর ওই মুহূর্তগুলো কৌশলে ভিডিও করে রাখেন আরিফুল। এসব ভিডিও পারভীনের স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন আরিফুল। এভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আরিফুল একাধিকবার পারভীনের সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন। এটিকেই সম্ভবত ‘ধর্ষণ’ হিসেবে উল্লেখ করে পারভীন চিরকূটে আরিফুলকে ‘রেপিস্ট’ আখ্যা দেন।
বছর খানেক আগে জাপানে চলে যান আরিফুল। সেখানে তিনি এক জাপানি নারীকে বিয়ে করেন।
দুই মাস আগে কানাডায় স্বামীর কাছে যান পারভীন। কানাডা যাওয়ার পর তাকে জাপান থেকে ফোন দিয়ে আরিফুল বলতেন বাংলাদেশে এসে যেন তার সঙ্গে দেখা করেন। না হলে তার কাছে থাকা গোপন ভিডিও স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেবেন।
পুলিশ ধারণা, এরপরই পারভীন ঢাকায় আসেন এবং সুযোগ বুঝে আরিফুলকে হত্যা করে পরদিন আবার কানাডায় ফিরে যান।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজন কুমার সাহা বলেন, আমাদের প্রাথমিক ধারণা, পারভীন আগের কোনো ক্ষোভের কারণে আরিফুলকে হত্যা করেছেন। মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। তদন্ত চলমান রয়েছে।
এদিকে, আরিফুলের মরদেহ পাওয়ার পর তার বড় বোন সাফরিজা আক্তার রেলি (৩০) বাদী হয়ে ভাটারা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় পারভীন ও তার কানাডা প্রবাসী স্বামী নাজমুলকে আসামি করা হয়েছে।
এবিনিউজ টুয়েন্টিফোর বিডিডটকম//এফ//